মেহেদী ইকবাল | কবিতাগুচ্ছ
মেহেদী ইকবাল | কবিতাগুচ্ছ
যত পারো দেখে নাও


উড়ে আসে রোদ পাখি, কী অপরুপ ডানা তার!
হাওয়ার নুপুর পায়ে নৃত্যরত গাছের পাতারা, ছোট একটা টুনটুনি
আনন্দে লাফিয়ে হাঁটে চিকন ডালে পেয়ারার
ছাপিয়ে সকল শব্দ শুনি আমি জানা অজানা পাখিদের গান।
ডানা মেলে উড়ে আসে প্রজাপতি, উড়ে ভ্রমর কিছু কয়েকটি ফড়িং
আকাশে রঙের হোলি সব কি আর যায় দেখা বস্তুবাদী চোখে?
যত পারো দেখে নাও থেকে যাবে সুন্দর অনেক অদেখা!
কেন তবে থুথু কফ হিংসার লাকড়ী হয়ে জ্বলা? ঐদূরে
জ্বলছে দ্যাখো শতাব্দীর চিতা, ঐ শোনো ফোঁপানো কান্নার ধ্বণি মৃত আত্মাদের!

অপরাহ্নে দু 'দন্ড বসে থাকো সবুজ ঘাসের বনে
দু 'চোখ ভরে দেখে নাও শিশুদের হাসিমুখ

উদার জমিন আর উদার আসমান!

আসুক আবার বৃষ্টি


এতোক্ষণে বৃষ্টি তবে থামলো! বৃষ্টির সাথে প্রকৃতির কত কথা
পাতারা মুখিয়ে ছিলো, সবুজ বৃক্ষরাজি আর নদীর দুইপাড় জুড়ে
যে ঘাসের বন, তারা সব অপেক্ষায় ছিলো।
অপেক্ষায় ছিলো মৃত্তিকার গভীরে গোপন গর্ভবীজ
রোদে পুড়ে ক্লান্ত কাক আর দলবদ্ধ শালিকেরা সব!
সমূহ কষ্ট ভুলে পানকৌড়ি তাকিয়েছিলো আকাশের দিকে
কাংখিত ছিলো সবার সফল সঞ্চালন হাওয়ার।
আজ বৃষ্টি শেষে উৎফুল্ল প্রকৃতি, সবুজ মেলেছে ডানা মেজাজে উৎসবের
পথে পথে উজ্জীবিত মানুষের মুখ, দেখি আজ মুখরিত সকল জনপদ
সবাই আজ ফেলেছে ছুঁড়ে হিসেবের খাতা, কি লাভ ছোট বড় ভেদরেখা টেনে?

আসুক আবার বৃষ্টি, ধূয়ে যাক বিভাজন মলিনতা সবার
পতন আর পচনের দিনশেষে বাঁচুক সংঘশক্তি মানুষের!

নকশী


রাত কবে আর নীরব ছিলো! সন্ধ্যে হতে না হতেই শুরু হয় ঝিঁঝিঁদের কোরাস
আর যত কীটপতঙ্গ, মাঝে মাঝে ব্যাঙের 'বস্তিওয়ালা জাগো '
একটা বেড়ালকে দেখি নিঃশব্দে হারিয়ে যায় কোথাও!
রাত যত বাড়ে বাড়তে থাকে এইসব আওয়াজ। কোথাও
ডেকে যায় রাতপাখি, এইসব ঝিঁঝিঁ আর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
যুক্ত হলে বৃষ্টির ফোঁটা টুপ্ টাপ ঝর্ ঝর্
ভেসে আসে ট্রেনের সিটি দু 'পাশে ছিটিয়ে জল
ছুটে যায় আন্তঃজেলা বাস। সারারাত ঝরাবো আজ
গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে জানিয়ে দেয় মেঘ। এইসব বিচিত্র আর বিপুল
শব্দের সাক্ষী হয়ে জেগে থাকে বর্ষার প্রতিটি রাত।

রাতে জেগে থাকে অনেকেই, অনেকের থাকে জানি জরুরী সব কাজ
হাতে কারো সূঁই সূতা সুনিপুণ করে যায় নকশীর কাজ!

এমন বৃষ্টির দিনে


থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, দেখি ভিজতে ভিজতে সকাল চলে যাচ্ছে কোথাও
পাতায় পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা, টিনের চালে ছাদে যেন উঠানামা সেতারের!
পাখিরা যে যার মতো আশ্রয় নিয়েছে খুঁজে, বেপরোয়া
দু 'একটি শালিক শুধু যাচ্ছে ভিজে খিদে নিয়ে।
কখন যে বিকেল এলো ভিজতে ভিজতে!
বিকেল আজ যাবেনা কোথাও, টেবিলে ধোঁয়া উঠা চা
চা খেতে খেতে আমরা দেখতে থাকি সৌন্দর্য বর্ষণের!

এমন বৃষ্টির দিনে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া গানগুলো
আহা! ফিরে আসে বকুল কুড়ানো ভোর, নির্জন পুকুরপাড়ে স্থির জলের মতো চোখ
প্রথম ফোটার আনন্দ নিয়ে ফিরে আসে লাজুক হাস্নাহেনার হাসি!

বুঝি এমন বৃষ্টির দিনে মানুষের না পাওয়ার বেদনাগুলো হু হু করে ঝরে!

রঙমিস্ত্রী


রঙ আনো ওহে রঙমিস্ত্রী, ঢেলে দাও বালতিতে তোমার
দৃঢ় হাতে তুলে নাও ব্রাশ, রজ্জুর সিঁড়ি বেয়ে তর্ তর্ উঠে যাও উপরে
ছুঁয়ে দাও আকাশ! মানুষের না পাওয়ার যত বেদনা, চাপা কষ্ট
ঢেকে দাও সুনিপুণ আঁচড়ে তোমার।

বালতি ভরা তোমার রঙ দাও ঢেলে শতাব্দীর ধ্বংসস্তূপে
তোমার রঙের ছোঁয়ায় উঠুক জেগে ঘুমন্ত ঘাসের বন
মাথা উঁচু করে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে যাক সবুজ বৃক্ষরাজি
বারুদগন্ধী হাওয়া বয়ে যাক বেহালার সুর হয়ে, পাখির কলকাকলিতে
মুখরিত হয়ে যাক যত আছে জনপদ!

রঙ আনো, আনো রঙ ওহে রঙমিস্ত্রী
রঙে রঙে সাজাও জীবন!


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান